“কেহ কতগুলি পরীক্ষা পাস করিয়া হৃদয়গ্রাহী বক্তৃতা করিতে পারিলেই তাহাকে তোমরা শিক্ষিত মনে কর। যাহা জনসাধারণকে জীবন-সংগ্রামের উপকরণ যোগাইতে সহায়তা করে না, তাহাদের মধ্যে চরিত্রবল, লোকহিতৈষণা এবং সিংহের মতো সাহস উদ্বুদ্ধ করে না, তাহা কি শিক্ষা নামের যোগ্য? স্কুল -কলেজে যে শিক্ষা তোমরা আজকাল পাইতেছ তাহা শুধু অজীর্ণরোগগ্রস্তের সংখ্যা বৃদ্ধি করিতেছে। তোমরা শুধু যন্ত্রের মত কাজ করিয়া চলিয়াছ, আর জীবনযাপন করিতেছ মেরুদন্ডহীন প্রাণীর মতো।”
“যে-ধৰ্ম বা যে-ঈশ্বর বিধবার অশ্রুমোচন করতে পারে না, অথবা অনাথ শিশুর মুখে একমুঠো খাবার দিতে পারে না, আমি সে-ধর্মে বা সে-ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না ।”
“তোমরা কি মানুষকে ভালবাসো ? ঈশ্বরের অণ্বেষণে কোথায় যাচ্ছ ? দারিদ্র , দুঃখী , দুর্বল – সকলেই কি তোমার ঈশ্বর নয় ? আগে তাদের উপাসনা করো না কেন ? গঙ্গাতীরে বাস করে কূপ খনন করছ কেন ?”
“বড় কাজ হাতে এলে অনেকেই বীর হয়, দশহাজার লোকের বাহবার সামনে কাপুরুষও অক্লেশে প্রাণ দেয়, ঘোর স্বার্থপরও নিষ্কাম হয়; কিন্তু অতি ক্ষুদ্র কার্যে সকলের অজান্তেও যিনি সেই নিঃস্বার্থতা, কর্তব্যপরায়ণতা দেখান, তিনিই ধন্য – সে তোমরা – ভারতের চিরপদদলিত শ্রমজীবী – তোমাদের প্রণাম করি।”
“সকলেই চায় হুকুম করিতে, আদেশ মানিতে কেহই প্রস্তুত নহে। প্রথমে সেবক হইতে শিখিলে তবেই পরে প্রভু হইতে পারিবে । ঈর্ষাত্যাগই এই ক্ষমতা লাভের প্রধান কৌশল।”
“কোনও রাষ্ট্রের মহত্ব বা শক্তিমত্তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে রাষ্ট্রের জনগণের কল্যাণকর ও মহৎ চরিত্রের উপর। পৃথিবীর সমস্ত ধনসম্পদের অপেক্ষা খাটি মানুষের মূল্য অনেক বেশী ।”
“যে শিক্ষা দ্বারা ইচ্ছাশক্তির বেগ ও স্ফূর্তি নিজের আয়ত্তাধীন হয়, তাই যথার্থ শিক্ষা।”
“কতকগুলো তথ্য, সারাজীবনে যার হজম হল না। খাপছাড়াভাবে সেগুলি মাথার মধ্যে ঘুরতে লাগলো -এর নাম শিক্ষা নয়। যদি কেউ পাঁচটি ভাব হজম ক’রে জীবন ও চরিত্র তদনুযায়ী গঠন করতে পারে, তাহলে সে, যে-ব্যক্তি গোটা গ্রন্থাগার মুখস্ত ক’রে ফেলেছে, তার চেয়ে বেশী শিক্ষিত।”
“মানুষ যত জ্ঞানলাভ করেছে, সবই মন থেকে। জগতের অনন্ত পুস্তকাগার তোমারই মনে। বাহির্জগৎ কেবল তোমার নিজ মনকে অধ্যয়ন করবার উত্তেজক কারণ। তোমার নিজ মনই সর্বদা তোমার অধ্যয়নের বিষয়। অভিজ্ঞতাই একমাত্র শিক্ষক।”
সূর্য যদি মেঘাচ্ছন্ন হয় কিছুক্ষণ
যদি বা আকাশ হের বিষণ্ণ গম্ভীর,
ধৈর্য ধর কিছুকাল হে বীর হৃদয়,
জয় তব জেনো সুনিশ্চয়।
শীত যায়, গ্রীষ্ম আসে তার পাছে পাছে,
ঢেউ পড়ে, ওঠে পুন তারি সাথে সাথে,
আলো ছায়া আগাইয়া দেয় পরস্পরে;
হও তবে ধীর, স্থির, বীর।
জীবনকর্তব্য-ধর্ম বড় তিক্ত জানি,
জীবনের সুখচয় বৃথা ও চঞ্চল,
লক্ষ্য আজ বহুদূরে ছায়ায় মলিন;
তবু চল অন্ধকারে হে বীর হৃদয়,
সবটুকু শক্তি সাথে লয়ে।
কর্ম নষ্ট নাহি হবে, কোন চেষ্টা হবে না বিফল,
আশা হোক উন্মূলিত, শক্তি অস্তমিত,
কটিদেশ হতে তব জনমিবে উত্তরপুরুষ,
ধৈর্য ধর কিছুকাল হে বীর হৃদয়
কল্যাণের নাহিক বিলয়।
জ্ঞানী গুণী মুষ্টিমেয় জীবনের পথে—
তবুও তাঁরাই হেথা হন কর্ণধার,
জনগণ তাঁহাদের বোঝে বহু পরে;
চাহিও না কারও পানে, ধীরে লয়ে চল।
সাথে তব ক্রান্তদর্শী দূরদর্শী যাঁরা,
সাথে তব ভগবান্ সর্বশক্তিমান্,
আশিস ঝরিয়া পড়ে তব শিরে—তুমি মহাপ্রাণ—
সত্য হোক, শিব হোক সকলি তোমার।
“নিজের উপর বিশ্বাস না আসিলে ঈশ্বরে বিশ্বাস আসে না “